“টেকসই উন্নয়ন সমৃদ্ধদেশ, নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ” এই স্লোগানকে সামনে রেখে-ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুরে “রাইয়ান জৈব কৃষি প্রকল্পে উৎপাদিত হচ্ছে ১০০% নিরাপদ সবজী, ফলমূল,মাছ ঝিনুকে মুক্তা। এর সফল উদ্যোক্তা হলেন,
ড. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার শিবনগর গ্রামের মরহুম লুৎফর রহমানের ছোট সন্তান। শৈশবে বাবা-মা হারায়ে লেখাপড়াসহ অভিভাবকের দায়িত্ব ভাইয়ের হাতেই পড়ে। গ্রামের একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়ার হাতে খড়ি। মাধ্যমিকে ৫টি বিষয়ে লেটার মার্কসহ (স্টার মার্কস) ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস থেকে ফিশারিজ বিষয়ে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই পি-এইচ. ডি ডিগ্রী লাভ করেন।তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বয়সে অল্প সময়ে পি-এইচ. ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর ড. নজরুল ইসলাম জাপানের সিজুওকা ইউনিভার্সিটি থেকে সামুদ্রিক প্রবালের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের ইফেক্ট নিয়ে গবেষণা করে ডক্টর অব সায়েন্স (ডি.এস-সি) ডিগ্রী লাভ করেন। জাপান ফেরত ড. নজরুল ইসলাম দেশে জাপানিজ সংস্থা জাইকা-তে উচ্চ বেতনে চাকুরি করতেন। ড. ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে- রাইয়ান ইসলাম (৫বছর) আর ছোট ছেলে- জাইয়ান ইসলাম (৬মাস)। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে জাপানিজ প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যায়। ফিরে আসেন নিজ গ্রামে, শুরু করলেন মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি জৈব-কৃষি প্রকল্প; যার নাম “রাইয়ান জৈব-কৃষি প্রকল্প। টেকসই উন্নয়ন, সমৃদ্ধদেশ, নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ। এই স্লোগানকে সামনে রেখে-ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুরের “রাইয়ান জৈব কৃষি প্রকল্পে উৎপাদিত হচ্ছে ১০০% নিরাপদ সবজী ও ফলমূল। কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই উৎপাদিত হচ্ছে নানা ধরনের সবজী ও ফলমূল। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই এখানে কোন ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার হয় না। বিকল্প হিসাবে জৈব সার, ভার্মি কম্পোস্ট, জৈববালাইনাশক, ফেরোমন ট্রাপ, ইত্যাদি ব্যবহারিত হচ্ছে। যা খাদ্যকে ১০০% বিষমুক্ত ও নিরাপদ রাখে। ৩.৩ একর বিশিষ্ট এই প্রকল্পে রয়েছে ২টি পুকুরসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির ফল-মুল, শাক-সবজী ও মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। রয়েছে নানা রকমের বিদেশী ফল-ফলাদি যেমন- দার্জিলিং ও চাইনিজ কমলা, ভিয়েতনামিজ খাটোজাতের নারিকেল, লাল কাঁঠাল, লাল কলা, আপেল, আঙ্গুর, আনার, মিয়াজাকি আম, ড্রাগন, দানব পেঁপে, চুই ঝাল, ইন্ডিয়ান এলাচ, ইত্যাদি। স্তরে স্তরে সজ্জিত রয়েছে এ সমস্ত গাছ। গাছের নামের সাথে মিল রেখে নাম দেওয়া হয়েছে মজাদার রাস্তার নাম। যেমন ড্রাগন রোড, অরেঞ্জ রোড, কোকো রোড, সেলফি রোড।
এছাড়াও রয়েছে সেলফি তোলার জন্য একটি সেলফি আইল্যান্ড। সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি পুকুরের পাড়কে উৎপাদনমুখী করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের সাথে চলছে দেশীয় প্রজাতির ঝিনুকের ভিতর মুক্তা চাষ। যা জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধি করবে। এ বিষয়ে রাইয়ান জৈব কৃষি প্রকল্পের পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম বলেন- জাপানের আদলে কিভাবে অল্প জায়গায় অধিক ফসল ফলানো যায় সেটায় মূল লক্ষ্য। তিনি ১০ বিঘা জমি থেকে কিভাবে ৩০ বিঘার ফলন পাওয়া যায় সেটা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাছাড়া আরো বলেন- নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষের স্বাস্থ্য এবং মাটি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে প্রথমত নিরাপদ খাদ্য ব্যবহারে মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বাজারজাতের সু-ব্যবস্থা থাকতে হবে। তৃতীয়ত রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য বিপণনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে কথা হয় কোটচাঁদপুর কৃষি অফিসার রাজিবুল হাসানের সাথে, তিনি প্রতিবেদক কে জানান, নিঃসন্দেহে রাইয়ান জৈব কৃষি প্রকল্পে উৎপাদিত ফসল মানুষকে যেমন নিরাপদে রাখবে তেমনি মাটি ও পরিবেশকেও সুস্থ রাখবে। অতএব সুস্থ সবল জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। তাই আসুন আমরা বিষমুক্ত নিরাপদ সুস্থ সবল মেধাবী জাতি
ও পরিবেশ গঠন করি।