সাতক্ষীরার ১৪০টি খাল অস্তিত্ব সংকটে ,পানি উন্নায়ন কর্মকতা জানেন না তার কাজ কী? বিপাকে কৃষক নেই কোন উদ্দ্যগ , খালের জমি প্রভাবশালীদের দখলে ,জেলা প্রশাসন আসে আর যায় কৃষককে দেখার কেউ নেই ,
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা সাতক্ষীরার ১৪০টি খাল। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন বলছে সাতক্ষীরায় ছোট বড় মিলে খালের সংখ্যা ৪২৯টি। অন্যদিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডর হিসাব অনুযায়ী জেলায় বর্তমান খাল রয়েছে ২৮৯টি। তবে এই ২৮৯টি খালের মধ্যে আবার বদ্ধ হয়ে আছে অন্তত দুই শতাধিক খাল। এদিকে এসব খালের অস্তিত্ববিলীন হওয়ার কারণে সাতক্ষীরা জেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধাতার কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে কৃষি জমি জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা করতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব খাল উদ্ধার করে উন্মুক্ত করার জন্য বার বার তাগিত দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছেনা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। নদী বাাঁচাও আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশেক-ই এলাহী বলেন, ছোট বড় মিলে জেলায় চার শতাধিক খাল ছিলো। এসব খাল বিভিন্ন নদীর সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে শহর এবং আশপাশের পানি নিষ্কাশন হতো। বিশেষ করে বহু খাল জেলার বিভিন্ন বিলের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়াতে ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক তদারকি না থাকায় এসব খালের অস্তিত্ববিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় নিয়মবহির্ভূত ও শ্রেণী পরিবর্তন করে অধিকাংশ খাল লীজ বা দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাতক্ষীরাবাসিকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে অবিলম্বে এসব খালের বন্দোবস্ত বাতিল করে পুনরুদ্ধার করে তা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও মানবাধিকার কর্মী এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণেই মূলত সাতক্ষীরার অধিকাংশ খাল আজ মৃত। অস্তিত্ব সংকটে ধুকছে খালগুলো। তিন থেকে চার দশক আগেও এ সমস্ত খালকে কেন্দ্র সাতক্ষীরার ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছিলো। শুধু তাই নয়, জেলা শহর ও জনবসতী এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম ব্যবস্থা ছিলো এসব খাল। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রভাশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য সাতক্ষীরার অধিকাংশ খাল অস্তিত্ববিলীন হতে থাকে। ফলে এসব খাল ভরাট হওয়ার কারণে আজ জেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্ধি হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। তিনি বলেন, জেলা প্রশসান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগ নিয়ে জেলার হারিয়ে যাওয়া সমস্ত খাল উদ্ধার করে পুনঃখননের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে আগামীতে সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরার বিনেরপোতাস্থ কার্যালয়ের প্রধান ড. শিমুল মন্ডল জানান, জলাবদ্ধতা সাতক্ষীরার কৃষিতে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে উপকুলীয় এলাকায় ফসল উদ্ভাবনে গবেষণা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আগামীতে জলাবদ্ধ জমিতে টিকে থাকতে পারে এমন ধান বা অন্য ফসলের জন্য গবেষণা করা হবে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিধপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এই মুহূর্তে জেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতায় গ্রাস করে ফেলেছে। তিনি বলেন, কৃষি জমি জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে হলে জেলার সকল খাল উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সমম্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি বারবার তুলে ধরা হলেও কোনো লাভ হচ্ছেনা বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এবং ২ এর তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরাতে ২৮৯টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এ ১৮০টি এবং ডিভিশন-২ এ খাল রয়েছে ১০৯টি। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, ডিভিশন-১ এ ১৮০টি খালের মধ্যে ৩০টি খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ৪২৯টি খাল রয়েছে জেলায়। কিন্তু সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এবং ২ হিসাব অনুযায়ী ২৮৯টি খাল পাওয়া যাচ্ছে। বাকী ১৪০টি খাল উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এসব হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জানান, ডিভিশন-২ এর অধিনে ১০৯টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে ৫৯টি খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। এসব খনন কাজ শেষের দিকে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, এ জেলায় ৪২৯টি খাল রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব খাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শুধু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়, জেলার সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, খাল অবৈধ দখল বা প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বলা হয়েছে।