পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ফলে পাকিস্তানিদের জন্য বাংলাদেশের ভিসার প্রক্রিয়া আরও সহজ হলো। আর এতে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বা নিরাপত্তা ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে গত ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (এসএসডি) এই শর্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার একদিন আগে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা নীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়।
এর আগে, গত নভেম্বর মাসে করাচি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সরাসরি কার্গো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। ঢাকার নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আরও কাছাকাছি এসেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঐতিহাসিকভাবেই খালেদা জিয়ার দল বিএনপি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ভারতপন্থি নীতির বিপরীত। পাকিস্তানের প্রতি ভারতের এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের অনিশ্চিয়তা বাড়ছে।বাংলাদেশের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মোবাশ্বর হাসান দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন,‘এটি পরিবর্তন নয় বরং বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা অবিরামভাবে বলছেন, তারা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চান যদিও ভারত এর প্রতিদান দিচ্ছে না। তারা শুধু হাসিনাকে আশ্রয় দেয়নি সবরং ভারতের রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের বিষয়ে ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্বালাময়ী মন্তব্য দিচ্ছেন।’তিনি আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসন ইঙ্গিত দিচ্ছে- তারা ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে আর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি দেখবে না। কারণ ভারতের প্রতিবেশী নীতিও ব্যর্থতার মুখে পড়েছে।’এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ছাড়পত্র তুলে দেওয়া ভারতের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন এই অঞ্চলে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করতে পারে এমন উদ্বেগও বাড়ছে।