বাঁশ শিল্পের দুর্দিনে হাল ছাড়েনি কোটচাঁদপুরের দাস সম্প্রদায় মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প। আগের মত নেই এই শিল্পের জৌলুস। তবে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণকে জীবিকার প্রধান বাহন হিসেবে আঁকড়ে ধরে আছেন উপজেলার ৫নং এলাঙ্গী ইউনিয়নের দাস পরিবারের মানুষ। এই বাঁশই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহন। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিলসহ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বাঁশ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুকে পড়ছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসময় গ্রামীণ জনপদে বাঁশ দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালি ও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র। তখনকার সময় কদরও ছিল জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী। বাঁশ আর বেতের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ছিলেন এখানকার কারিগররা। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক আর কাঠের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। জানা গেছে, ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামে এ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল প্রাচীন কাল থেকে। অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল । বেতের পাটি, বাঁশের খাঁচা, মাচা, চাটাই, গোলা, সুড়ি, চাই, মোড়া, ডালা, কুচা, টুরকি, কাপি, চালুনিসহ নানা ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করত এক সময়। এই ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন কুমার দাস বলেন, বাবার থেকে শিখে ঐতিহ্য ধারণ করে বংশানুক্রমে চলে আসছে তাদের এ পেশা। শিল্পের দুর্দিনে হাতেগোনা কিছু সংখ্যক পরিবার শিল্পটিকে আঁকড়ে ধরে আছেন। নানাবিধ সংকটের ফলে মুল এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় শতাধিক পরিবার। ফলে বিলুপ্তর পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পুর্বপুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা। স্থানীয় বাসিন্দা বকুল কুমার দাস পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাজারে চাহিদা কম থাকা ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় তেমন লাভের মুখ দেখতে পারছেন না তারা। তিনি প্রতি ঝাপি ১৫০ টাকা, টেপারি ১৪০ টাকা, চ্যাঙারি ২০০-২৪০ টাকা, পেতে ১০০ টাকা, চালন ১৩০ টাকা, পলো ৫০০ টাকা ও চাটাই পাইকারি ৪৫০ টাকা দামে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করছেন। রবিন দাস বলেন, প্রতিটি বাঁশ কিনতে হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। পরিবারের সদস্যরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি একাজে সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে জানান, বাঁশ-বেত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। এটিকে টিকিয়ে রাখা জরুরী। এ শিল্পের সাথে যারা জড়িত আছেন, তারা যোগাযোগ করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনার ব্যবস্থা করব। এছাড়া বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।