শামীম হোসেন।
এগারো শিব মন্দির বাংলাদেশের যশোর জেলায় অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। সতেরো শতকের মাঝামাঝিতে রাজা নীলকণ্ঠ রায় এই মন্দিরগুলো স্থাপন করেন। অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ভৈরব নদীর তীরে এই স্থাপনাটি অবস্থিত। যশোর সদর উপজেলা থেকে এর দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার।
যশোরের তৎকালীন রাজা নীলকণ্ঠ রায়ের একমাত্র কন্যা ছিলেন রানী অভয়া। ভৈরব নদের তীরে ভাটপাড়ার পাশেই ছিল রাজার দুর্গ। সেখানকার প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে ওঠেন রাজ কন্যা অভয়া। দেখতে দেখতে হয়ে গেল তার বিয়ের বয়স । রাজা নীলকন্ঠ রায় মেয়ের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিভিন্ন রাজপরিবার থেকে অভয়ার বিয়ের সম্বন্ধ আসতে লাগলো।
শেষপর্যন্ত রাজা নীলকন্ঠ রায় তখনকার সময়ের প্রভাবশালী নড়াইল জমিদার বংশের পুত্র নীলাম্বর রায়ের সঙ্গেই রানী অভয়ার বিয়ে ঠিক করলো। বিয়ের সানাই বাজল রাজদুর্গে। স্বামীর সঙ্গে বেশ ভালোই কাটছিল অভয়ার সংসার।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অভয়ার স্বামী নীলাম্বর রায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
রাজা নীলকন্ঠ রায়ের একমাত্র কন্যা অভয়া বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বিধবা হন। রাজকন্যা ছিলেন মহাদেব শিবের উপাসক। সে সময়ে হিন্দু ধর্মে দ্বিতীয় বিয়ের নিয়ম না থাকায় অভয়া বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটাতে চান। এরপর ১৭৪৫ থেকে ১৭৬৪ সালের মধ্যে মেয়ের জন্য ভৈরব নদের পাড়ে এগারোটি পৃথক শিব মন্দির নির্মাণ করেন রাজা নীলকণ্ঠ রায়। পরবর্তী সময়ে মেয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে ওই গ্রামের ও নগরীর নামকরণ করেন অভয়ানগর। কালের বিবর্তণে সেই অভয়ানগর এখন অভয়নগর নামে পরিচিত।
রাজকন্যা সারাদিন সেখানেই শিবের ভক্তি করতেন।
মনের কষ্টে ঢুকরে কেঁদে উঠতেন অভয়া। তার কান্নার শব্দ যেন প্রকৃতি ও আকাশ বাতাস ভারি করে তুলতো। এভাবেই পার করেন দুঃখী রাজকন্যা বাকিটা জীবন । কথিত আছে, আজও না-কি রাতের বেলায় কোনো নারীর কান্নার শব্দ শোনা যায় মন্দিরের ভেতর থেকে।